• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

কুষ্টিয়ায় লালন স্মরণোৎসব সমাপ্ত শেষ হলো “গুরু শিষ্যের মিলন মেলা”

  • ''
  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০২৪

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

পূণ্য সেবার মধ্য দিয়ে সাধুদের মুল আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাধুরা নিজ নিজ বাড়ী ফিরতে শুরু করেছে। আজ সোমবার ২৫ মার্চ সকাল থেকে সাধু ভক্তরা লালন চত্বর ছেড়ে নিজ গৃহে চলে যাওয়ার ফলে লালন চত্বর ফাকা হতে চলেছে। বিদায় লগ্নে অনেক সাধু লালন ভক্তরা চোখের জল ভাসিয়ে লালন চত্বরের আসন ছেড়েছেন। আবার ১লা কার্তিক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই এর ধামে আসবে তারা। সাধুদের মধ্যে অনেকেই আজকের দিনও লালন চত্বরে অবস্থান করবে বলে কয়েকজন লালন ভক্তরা জানায়।

এর ফলে সাধুদের ভাঙ্গল মিলন মেলা। ২৪ মার্চ রবিবার দিনরাত ধরে এক তারা দোতারা বাদ্য যন্ত্র নিয়ে সাধুরা গানের মধ্য দিয়ে লালনকে স্মরন করতে থাকে। “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি”, “মায়েরে ভজলে হয় বাপেরই পরিচয়”, “মিলন হবে কত দিনে” “ রাত পোহালে পাখি বলে, দে রে খাই দে রে খাই” লালন সঙ্গীতের লালনের আধ্যাত্মিক গানে লালন চত্বর মুখরিত হয়। দিন রাত চলে সাধু ভক্তদের লালন সংগীত। লালনের আধ্যাত্মিক গানের মধ্যেই খুজে পেয়েছে লালনের দর্শন। বাউল সম্রাট লালন সাঁইয়ের স্মরণোসৎসব রবিবার বিকেল ৩টায় লালন একাডেমী মিলনায়তনে আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে সমাপনি ঘটে।

তবে এবার পবিত্র মাহে রমজান এর কারণে লালন স্মরোণৎসবে দেশ বিদেশ থেকে আসা লালন ভক্তদের সংখ্যা ছিল অনেকটা কম। প্রতি বছর লালন স্মরণোৎসবের অনুষ্ঠান চলে ৩ দিন ব্যাপী। এবারই এক দিনেই শেষ করা হয়েছে । তবে একদিনে অনুষ্ঠান হলেও কমতি ছিল না। দেশ-বিদেশ থেকে আসা লালন অনুসারীরা লালন চত্বরে সাধুদের পাশে বসে ভীড় জমিয়ে লালনের সন্ধ্যানে ব্যকুল হয়ে উঠে।

বিদায়কালে লালন ভক্তরা কান্নার সুরে বলেন, মরমী সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের গানের মাঝেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টির রহস্য। সৃষ্টিকর্তার সাথে আত্মিক সম্পর্ক তাঁর গানের মূলমন্ত্র। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের সঙ্গীত আজও আমাদের অনুপ্রানিত করে। এই মহান সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের স্মরণোৎসব (দোলপূর্ণিমা)। লালনভক্ত ও অনুসারীরা জানান, লালন ফকির তার জীবদ্দশায় প্রতিবছর তার শিষ্য ও অনুসারীদের নিয়ে দোল পূর্ণিমা তিথিতে দোল উৎসব ও সাধু সংঘের আয়োজন করতেন। সেই থেকে প্রতিবছর লালন সাঁইজির আখড়াবাড়িতে দোল উৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয় সাধুসঙ্গ। তবে পবিত্র মাহে রমজান এর কারণে এবার শত বছরের নিয়ম পূর্ণিমার এ উৎসব ৩ দিনের পরিবর্তে ১ দিনে শুরু ও শেষ করা হয়। শেষ হলো পূর্ণিমার রাতেই।

তবে লালনের মূল ধারার যেসব সাধক এবং অনুসারীরা এসেছিলেন তারা পরম্পরা মেনে ২৪ মার্চ দোল পূর্ণিমা তিথিতে সন্ধ্যায় অধিবাসের মাধ্যমে সাধুসঙ্গ শুরু করলেও মুলত এই রাতেই অধিবাসের মধ্যেই পূর্নসেবা গ্রহন করেন। রাতেই পূর্ণ সেবার মাধ্যমে শেষ করলেন সাধুসঙ্গ।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির উদ্যোগে লালনের কর্মময় জীবন ও দর্শন নিয়ে শুধুমাত্র আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

লালন একাডেমীর আয়োজনে লালন স্মরণোৎসবে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব এর পাশাপাশি সাদা পোষাকে আছে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।

১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ১লা কার্তিক ভোরে এই মরমী সাধক বাউল সম্রাট দেহত্যাগ করেন এবং তাঁর সাধন-ভজনের ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়। লালনের মৃত্যুর পর তারই ধারাবাহিকতায় দোল পূর্নিমার অনুষ্ঠান হয়ে আসছে।

২৪মার্চ বিকেল ৩টায় লালন একাডেমীর সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ এহেতেশাম রেজার সভাপতিত্বে লালন একাডেমী অডিটোরিয়ামে উদ্বোধনী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের সদস্য ( কুষ্টিয়া-৩) ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহাবুব উল আলম হানিফ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদ সদস্য কুষ্টিয়া-৪ আবদুর রউফ, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মোঃ এ এইচ এম আবদুর রকিব, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ¦ মোঃ সদর উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজগর আলী, কুমারখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ, আব্দুল মান্নান খান, কুমারখালী পৌরসভার চেয়ারম্যান মোঃ সামছুজ্জামান অরুনসহ কুষ্টিয়ার বিশিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গরা। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক এ্যাডভোকেট লালিম হক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads